করোনা ভাইরাসের নতুন নাম কোভিড-২০১৯


Novel coronavirus 2019 became COVID-2019 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অফিশিয়ালি নোভেল করোনা ভাইরাস ২০১৯ এর নাম পরিবর্তন করে রেখেছে কোভিড-২০১৯ (COVID-2019)। COVID-2019 মানে হচ্ছে করোনা ভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ নোভেল অর্থ হচ্ছে অভিনব বা নতুন যার মানে হচ্ছে নতুন করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাস কোনো নির্দিষ্ট ভাইরাস নয় বরং এটি ভাইরাস গ্রুপ। আমাদের যে সর্দি হয় এর জন্যও করোনা ভাইরাসের কোনো না কোনো ভাইরাস দায়ী তবে সেটা কোভিড-২০১৯ নয়।

WHO কেনো করোনা ভাইরাসের নাম পরিবর্তন করলো?

এর উত্তরের বলা যায় এই নাম পরিবর্তন করা WHO এর গাইডলাইনের মধ্যে পরে।

২০১৫ সালে বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাথে একটি বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গাইডলাইন প্রণয়ণ করেন। গাইডলাইনে বলা হয়েছে যে ভাইরাসটির নাম এমন হতে পারবে না যে যাতে এটি কোনো ভৌগলিক স্থান, প্রাণী কিংবা কোনো জাতির নামের সাথে মিলে যায়। যার জন্য দ্বন্দের বা বৈষম্যের সৃষ্টি হতে পারে। ব্যাবসা বাণিজ্যেও এর বড় ধরণের প্রভাব দেখা দিতে পারে। ভাইরাসের নাম এমন হওয়া যাবে না যে জাতে কোনো দেশের পর্যটন, বাণিজ্য কিংবা সংস্কৃতিতে প্রভাব না ফেলে। ভাইরাসের নাম হতে হবে সহজ ও সহজেই মনে রাখার মতো। এতকিছু মাথায় রেখেই নামকরণ করা হয়ে থাকে একটি ভাইরাসের নাম।

নোভেল করোনাভাইরাস ২০১৯ এর নামও এই রেগুলেশনের উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান প্রদেশে প্রথম এর অস্ত্বিতের প্রমাণ মিলে। সম্প্রতি অস্ট্রোলিয়াতে কিছু এশিয়ান মানুষ করোনাভাইরাসের জন্য অস্ট্রোলিয়াতে হেনস্থার স্বীকার হয়েছে। যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। যাতে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় আগে থেকেই এর জন্য সতর্ক করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহা পরিচালক আদহানম গেব্রিহেসুস। তিনি আরো বলেছেন "একটি ভাইরাসের তান্ডব একটি টেরোরিস্ট এটাকের থেকেও বেশি।"

তাছাড়া কিছু পত্রিকায় এটিকে চীনের ভাইরাস বলে উল্লেখ করায় বিভিন্ন মহল থেকে এর তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। এর আগের ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ যদিও নাম রাখা হয়েছিলো কঙ্গোর একটি নদীর নামানুসারে। তবে এই ভাইরাস কঙ্গোতে প্রথম শনাক্ত হলেও এর পরপরই দক্ষিন সুদানেও শনাক্ত করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুধু এই প্রথমবারই কোনো ভাইরাসের নাম পরিবর্তন করেনি এর আগেও করেছে। ২০০৯ সালের মহামারী আকারে ছড়িয়ে "সুয়াইন ফ্লু" ভাইরাসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিলো Influenza A(H1N1). এটি একটি নির্দিষ্ট প্রাণির নামে রাখার কারণে আমেরিকা ও মেক্সিকোতে মাংস কেনার ক্ষেত্রে মানুষ ভীত থাকতো। যার ফলে মাংস শিল্পে বিরুপ প্রভাব পরে। ফলে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়।

একই ভাবে ১৯১৮ এর ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যান্ডেমিক এর নাম ছড়িয়েছিলো স্প্যানিশ ফ্লু হিসেবে। যদিও এটার উৎপত্তিস্থল স্পেইনে নয়। WHO এর মতে এটি সর্বপ্রথম পাওয়া যায় আমেরিকাতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি ফ্রান্স হয়ে স্পেনে প্রবেশ করে। ততদিন অব্দি এর নাম গোপন করে আসছিলো আমেরিকান গণমাধ্যম। তখন এটির নাম ছিলো "Disease XI". ডিজিজ ১১ ছিলো এটির কোড নেইম বা সাংকেতিক নাম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর এটি স্পেনে ছড়িয়ে পড়লে এটি প্যান্ডেমিক আকার ধারণ করে। এটি স্প্যানিশ ফ্লু হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। স্পেনের মাধ্যম ছিলো মূলত খোলাখুলি সেখানে এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিলো তখন। পরে WHO নিশ্চিত করে বলে ছিলো যে এটি স্পেনে নয় বরঙ আমেরিকায় উৎপত্তি হয়েছিলো। স্প্যানিশ ফ্লু থেকে এর নাম দেয়া হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যান্ডেমিক। উক্ত ঘটনার ফলে স্পেন সম্পর্কে পৃথিবীবাসীর ভীতি তৈরি হয় ফলে স্পেনের পর্যটন শিল্পসহ বাণিজ্য  শিল্পে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

তাছাড়া ২০০২ সালের SARS ( severe acute respiratory syndrome) ভাইরাস আর ২০১৫ সালের MERS (Middle east Respiratory syndrome)  ভাইরাসেরও নাম পরিবর্তন হয়েছে।

উল্লেখ্য যে SARS,MERS, COVID-2019 এরা সকলেই একধরণের করোনাভাইরাস।
 তবে এখন পর্যন্ত মারাত্মকরার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি মারাত্মক ধরা হয়ে থাকে MERS ভাইরাস কে কারণ এর দ্বারার আক্রান্তের মৃত্যুর হার ছিলো  প্রায় ৩৬% যার মানে হলো প্রতি তিনজন আক্রান্তের মধ্যে ১জন মারা যাবে। আর SARS ভাইরাসের মর্টালিটি রেইট ছিলো প্রায় ১০% এর মতো। অপরদিকে COVID-2019 এর এখন পর্যন্ত যে ডাটা আছে তার উপর ভিত্তি করে এর মর্টালিটি হার মাত্র ২.১%।





Comments

Popular posts from this blog

মেলানেশিয়া অঞ্চল পরিচিতি

যে পাঁচটি ভাষা সেখা সবচেয়ে কঠিন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়কৃত অন্যতম তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল